উমরাহ পালনকারীর প্রথম কর্তব্য হচ্ছে , উমরাহ এর সঠিক নিয়ম কানুন ( umrah guide ) ভালো ভাবে শিখে নেওয়া । একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ উমরাহের নিয়ত করতে হবে । এই উমরাহ , আল্লাহ্পাক এর পক্ষ থেকে একটি দয়া, যার মাধ্যমে আমরা নিষ্পাপ হইতে পারি , আমরা পবিত্র হইতে পারি , আমাদের নেকীর পাল্লা ভারী করতে পারি , তাই রাব্বুল আলামিনকে খুশি করার নিয়তে আমাদের উমরাহ করতে হবে। সঠিক ভাবে উমরাহ পালনের জন্য, এই Umrah guide এ সবকিছু সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রাসূলে করিম ( সা:) বলেছেন :
“তোমরা বেশি বেশি করে উমরাহ এবং হজ করো । লোহা অথবা সোনা আগুনে গলানোর ফলে যেভাবে ময়লা বা খাদ দূর হয় যায় , উমরাহ এবং হজ এর মাধ্যমে আল্লাহ সে ভাবে আমাদের পাপ এবং অভাব দূর করে দেন“।
“এক উমরাহ থেকে আরেক উমরাহ এর মধ্বর্তী ছোট ছোট পাপ সমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন “।
NOTE : আমাদের অভিজ্ঞ Umrah Guide ( মাওলানা ) কোরান ০সুন্নাহ মতো ধর্য্য সহকারে উমরাহ পালনে আপনাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে । উমরাহ যাত্রীগণকে মক্কাহ হোটেল থেকে মসজিদ আল হারাম এ নিয়ে যাবে এবং উমরাহ শেষ করে হোটেলে পৌঁছে দেয়া হয় | Jetway Hajj Umrah Group
উমরাহর ফরজ ২টি
- ইহরাম বাঁধা ( নিয়ত করা )
- তাওয়াফ করা
উমরাহর ওয়াজিব ২টি
- সায়ী করা
- মাথা মুন্ডন করা , মহিলাদের চুল ছোট করা ।
Ihram and Talbia ( ইহরাম ও তালবিয়া )
উমরাহ এর প্রথম কাজ হচ্ছে পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল বা ওযু অবস্থায় মীকাত থেকে ihram এর মাধ্যমে উমরাহ এর নিয়ত করা। ইহরাম এর ২ টুকরা সেলাইবিহীন কাপড় ( পুরুষ ) পরবে, মহিলা উমরাকারীগণ সম্পূর্ণ শরীর ঢিলাঢালা ভাবে আবৃত করে এমন পোশাক পরবে , তবে মুখমন্ডল এবং হাতের কব্জি খোলা থাকবে । মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ থেকে পর্দা করার জন্য ওড়না জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে | নামাজের সময় হলে নামাজ পরবে ।
উমরাহ নিয়ত : ” লাব্বাইকা উমরাহ “
অতঃপর উচ্চস্বরে ( পুরুষ ), নিন্মস্বরে ( মহিলা ) তালবিয়া পাঠ করবে এবং তাওয়াফ শুরু করার আগে পর্যন্ত চলবে|
لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ , لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ , اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ , لاَ شَرِيْكَ لَكَ
উচ্চারণ- লাব্বাইক আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক, লা-শারি-কা লাকা লাব্বাইক , ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি`মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারি-কা লাক।
অর্থ- আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।
How to perform Tawaf for Umrah
( উমরাহ তাওয়াফ এর নিয়ম )
উমরাহকারীগণ তাওয়াফ এর উদ্দেশে পবিত্র কা’বার দিকে অগ্রসর হবে । পুরুষগণ ইজতিবা করবে । এরপর তাঁরা হাজরে আসওয়াদ – গ্রীন লাইট লাইন থেকে ” আল্লাহুআকবার ” বলে তাওয়াফ এর সাত চক্কর শুরু করবে এবং আসওয়াদে এস শেষ হবে। তাওয়াফ এর কোনো নিদৃষ্ট দোআ নেই । নিজের ইচ্ছানুযায়ী দোআ করবে , কোরান তিলাওয়াত করবে। রুকনেয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ এর মধ্যেখানে একটি দোআ পড়বে ।
” Rabbana atina fid-dunya hasanatan wa fil ‘akhirati hasanatan waqina ‘adhaban-nar “
এভাবে সাত চক্করের মাধ্যমে উমরাহ তাওয়াফ শেষ করবে । রমল করা সুন্নত , পুরুষগণ প্রথম তিন চক্কর দ্রুতপায়ে চলবে ।
উল্লেখ্য যে তাওয়াফের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
- হাতিমের ভিতর দিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না , হাতিম কাবার অংশ ।
- হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুমো দেয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি / অন্য হাজীদের কষ্ট দেয়া হারাম ।
- কাবা ঘরের কোনো অংশ / মাকামে ইব্রাহিম স্পর্শ করে শরীরে মোছা জায়েয নেই , এসব কাজ সম্পূর্ণ ভাবে বিদাত।
- দলগতভাবে উঁচু আওয়াজ করে দোআ করে অন্যদের কষ্ট দেয়া যাবে না । মনের আবেগে নিচুস্বরে দোআ কালাম পড়া উত্তম।
- কাঁধ খোলা রেখে নামাজ পড়া যাবে না। তাওয়াফ করার সময় নামাজের সময় হলে , কাঁধ ঢেকে নামাজ পড়তে হবে ।
- মহিলাদের হায়েজ / নেফাস অবস্থায় তাওয়াফ জায়েজ নেই । তবে সায়ী করতে পারবে , কারণ সাফা-মারওয়া মসজিদে হারাম এর অন্তর্ভুক্ত নয় ।
তাওয়াফ শেষ করে ডান কাঁধ ঢেকে দিবে । মাকামে ইবব্রহিমের পেছনের দিকে যেকোনো সুবিধা জনক স্থানে দুই রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ আদায় করে নিবে । ১ম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরায়ে কাফিরুন এবং ২য় রাকাতে সূরায়ে ফাতিহার পর সূরায়ে ইখলাস পড়বে । অন্য সূরা দিয়ে পড়লেও ক্ষতি নেই । অতঃপর জমজম পানি পান করে সায়ী করার জন্য সাফা – মারওয়ার দিকে অগ্রসর হবে।
সা’য়ী
সাফা পাহাড় থেকে উমরাহ সায়ী শুরু করতে হবে। সাফা পাহাড়ে আরোহন করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তালার প্রশংসা করবে , তিনবার তাকবীর দিবে , দুই হাত তোলে দোআ করবে । তারপরে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ের দিকে যেতে থাকবে । এই সময় নিজের জন্য , আত্মীয়স্বজনের জন্য, সমস্ত মুসলিমউম্মার কল্যাণের জন্য যেকোনো দোআ করতে পারবে। পুরুষগণ সবুজ লাইট এরিয়া দ্রুতপায়ে অতিক্রম করবে , মহিলাগণ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলবে ।
মারওয়ায় পৌঁছানোর পর উমরাকারীগণ কিবলামুখী হয়ে মনের আবেগ দিয়ে নিজের জন্য তথা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য দোআ করবে, অতঃপর সাফার দিকে হেঁটে যেতে থাকবে । সবুজ লাইট এর জায়গা পুরুষগণ দ্রুতপায়ে অতিক্রম করবে , মহিলাগণ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাবে | সাফা থেকে মারওয়া এক চক্কর । মারওয়া থেকে সাফা এক চক্কর । সায়ী শেষ হবে মারওয়ায় । এইভাবে সাত চক্কর সায়ী শেষ হবে । অসুস্থতা / বার্ধক্য জনিত কারণে WHEEL চেয়ার ব্যবহার করতে অসুবিধা নাই ।
সাই শেষে পুরুষ উমরাকারীগণ মাথা মুন্ডন করবে বা চুল ছোট করবে। চল ছোট করার সময় পুরো মাথা থেকেই কাটবে । তবে মাথা মুন্ডন করা উত্তম । মহিলাগণ মাথা মুন্ডন করবে না। সমস্ত চুল একসাথে ধরে , আগা থেকে ১ ইঞ্চি পরিমান চুল কেটে দিবেন ।
এভাবে উমরার কাজ শেষ হবে, অতঃপর উমরাকারীগণ হালাল হয়ে যাবেন ।
ইহরাম অবস্থায় যা করা বৈধ
- শুধু পানি বা সুগন্ধ বিহীন সাবান দিয়ে মাথা ও শরীর ধোয়া যাবে ।
- ক্ষত স্থানে বেন্ডেজ লাগানো যাবে ।
- চশমা , ঘড়ি , বেল্ট, সেফটিপিন , ইয়ারফোন ব্যবহার করা যাবে ।
- সেন্ডেল, আংটি পড়া যাবে ।
- মাথায় ছাতা ব্যবহার করা যাবে ।
- ইহরামের পোশাক পরিবর্তন এবং পরিষ্কার করা যাবে ।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ সমূহ
- চুল, নখ কাটা
- কাপড়ে বা শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা
- ইহরামের কাপড় মাথায় লেগে থাকে এমন কিছু পড়া , যেমন টুপি, পাগড়ি , ইত্যাদি
- ইহরাম অবস্থায় পুরু শরীরে বা আংশিক ভাবে সেলাই করা কাপড় পরিধান করা
- স্বামী-স্ত্রী শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো বা এ সংক্রান্ত কিছু করা
- বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ( মুহরিম অবস্থায় বিয়ে করা যাবে না ).
- Ihram অবস্থায় মহিলারা হাতমোজা পরবেনা, নেকাব দিয়া চেহারা ঢাকবে না । মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ থেকে পর্দা করার জন্য ওড়না জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে ।
- কোনো প্রাণী শিকারের উদ্দেশে ধাওয়া করা / শিকার করা
- হারাম এরিয়াতে গাছের পাতা / ডাল ভাঙা ।